হেডলাইন দেখে হয়তো বলবেন আমি ভুলভাল এইসব কি বলছি? ইসলাম ধর্ম অনুযায়ী মুসলিমদের তো বছরে দুইটা ঈদ।
পবিত্র ঈদুল ফিতর ও পবিত্র ঈদুল আজহার ঈদ মুসলিমদের জন্য সবচেয়ে বড় দুইটি উৎসব। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্যি আমাদের বাংলাদেশে শ্রেণী বৈষম্য এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে কিছু কিছু মানুষের হাতে দেশের প্রায় অর্ধেক সম্পত্তি রয়েছে। আর দেশের বেশিরভাগ মানুষ নিম্নবিত্ত-মধ্যবিত্তে পরিণত হয়েছে।
গরিব শ্রমিকদের ঘাম ও রক্তের উপর দাঁড়িয়ে ঘুষ, দূর্নীতি, শোষণ লুটতরাজ চালিয়ে তারা এখন এলিট শ্রেণী। বিদেশে অর্থপাচার করে দেশের অর্থনীতিকে ধ্বংস করে দিয়ে মধ্যবিত্তের কোমর ভেঙে দিয়েছে, উল্টো এলিট ও শাসকগোষ্ঠীর বাড়তি ভ্যাট, কর, ট্যাক্সের বোঝা বহন করতে হচ্ছে মধ্যবিত্তদের।
আর নিম্নবিত্ত গরিব শ্রমিক ভাই-বোনেরা তো কঠোর পরিশ্রম করে মাথার ঘাম পায়ে ফেলার পরেও তাদের পরিশ্রমের ন্যায্য মুজুরীটাও পায়না, মাসের পর মাস বেতন ভাতা বকেয়া রাখছে গার্মেন্টস ও চা শিল্পের মালিকরা।
দাবি দাওয়া তুললে, অধিকার আদায়ের আন্দোলন করলে মালিক ও শাসকগোষ্ঠীর লেলিয়ে দেওয়া পুলিশ প্রশাসন শ্রমিক মেহনতি মানুষের উপর জুলুম নির্যাতন ও গুলি বর্ষণ করছে।
এইতো মাত্র কয়েকদিন আগে সাভার, আশুলিয়া, বাইপাল এইসব এলাকায় গিয়েছিলাম সেইখানে বেশ কিছু গার্মেন্টস শ্রমিক ভাই-বোনদের সাথে কথা বলেছি, জানতে চেয়েছি তাদের দুঃখ দূর্দশার কথা। মালিক পক্ষের জুলুম নিপীড়নের শেষ নেই, সেই সাথে ব্যক্তিগত কষ্টের কাহিনীও রয়েছে অনেক সেইসব লিখব অন্যদিন।
তবে জানতে চেয়েছিলাম ঈদে বাসায় কবে যাবে? বেশিরভাগ মানুষের উত্তর ছিলো এই ঈদুল ফিতরের ঈদে বাসায় যাবে না।
খুশির এই ঈদে কেন বাসায় যাবে না এই প্রশ্ন করি?
উত্তর আসে ভাই মাসে যে টাকা কামায় করি অর্থাৎ বেতন পায় তা দিয়ে সংসার চালানো, ছেলে মেয়েদের পড়ালেখা চালানোটাই কঠিন হয়ে যাচ্ছে, ভবিষ্যতের জন্য জমাতে তো কিছুই পারিনা। এরমধ্যে যদি ঈদে গ্রামের বাড়ি যায় তাহলে বাবা-মা সহ অনেকের জন্য কিছু না কিছু কিনতে হবে, পোশাক/জুতার যত দাম তা আসলে আমাদের জন্য কেনাকাটা করা কঠিন। আমাদের তৈরি পোশাক/জুতা ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় দ্রব্য আমরাই কিনতে পারিনা সেই সামর্থ্য হয়না ভাই আমাদের।
তাছাড়া উত্তরবঙ্গ যেতে ঈদের সময় বাস-ট্রেনের টিকিট পাওয়াও যায় না। এই সময়ে বাস মালিকেরা জুলুম করে এক টিকিটের দাম নেয় ২০০০-২৫০০ টাকা পর্যন্ত আর ট্রেনের টিকিট তো পায়না এমনকি ট্রেনের ছাদে পর্যন্ত ঝুলে যেতেও বিন্দু পরিমাণ জায়গা পায়না। পরিবারকে নিয়ে গ্রামের বাসায় যাতায়াত ভাড়া আর কিছু শপিং করলে সবমিলিয়ে আসা-যাওয়া কমপক্ষে ১৫-২০ হাজারের উপরে খরচ হয়ে যাবে। গ্রামের বাড়িতে সবার সাথে ঈদ করা ইচ্ছে থাকলেও আমাদের মতো গরিব মানুষদের এত টাকা খরচ করে দুই দুইবার যাওয়া শুধুমাত্র বিলাসিতা তাই এই ঈদে না গিয়ে সরাসরি কুরবানীর ঈদে একেবারেই যাব ভাই যদি বেঁচে থাকি আর আল্লাহ্ সামর্থ্য দেয়।
দুই চোখ জুড়ে টলমলিয়ে গড়িয়ে পড়ছে পানি আর এমনভাবেই মনের আক্ষেপ, পাওয়া না পাওয়ার কষ্টের কথা বলেছেন গার্মেন্টসে চাকরি করা অধিকাংশ ভাই-বোনেরা।
এমনিভাবে একই প্রশ্নের উত্তর জানতে চেয়েছিলাম ঢাকার বিভিন্ন জায়গায় রিক্সা চালাতে আসা রিক্সা শ্রমিক ভাইদের। তাদেরও কাছাকাছি সেইম উত্তর। তবে কিছু ক্ষেত্রে তাদের আক্ষেপ ভিন্ন যেমনঃ তারা রিক্সা চালিয়ে যে টাকা কামায় তা আসলে সাময়িক ভাবে বেশি মনে হলেও কঠোর পরিশ্রম করার কারণে বিভিন্ন শারীরিক রোগ ও দূর্বলতায় ভুগতে হয় একসময় অক্ষম হয়েও পড়ে অনেকেই। দীর্ঘদিন ধরে গ্রাম থেকে এসে ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেট সহ বিভিন্ন শহরে পরিবার ছাড়া একা একা থাকতে হয়। কঠোর পরিশ্রম সত্বেও খাওয়া দাওয়া ভালো না হওয়ায় পুষ্টিহীনতায় ভুগতে হয় এবং দীর্ঘদিন সঙ্গীহীন জীবনে থাকায় অবসাদগ্রস্ত হয়ে পড়ে তাদের জীবন।
এত কিছুর পরে সরকারের কোনো সহায়তা থাকে না, উল্টো ট্রাফিক পুলিশ-প্রশাসনের বিভিন্ন আইন ও জুলুমের শিকার হতে হয়। ইনকাম না থাকলেও অমানবিক মালিক পক্ষের প্রতিদিনের বাড়তি জমাও তাদের কষ্টের আরও একটি কারণ।
এমনভাবে প্রাইভেট সেক্টরে ছোটখাটো চাকরিরত বহু ভাই-বোনেরাও বলেছে আর্থিক সমস্যা ও পরিবহন খরচ ইত্যাদির ফলে এই ঈদে ইচ্ছে থাকলেও গ্রামের বাড়ি যাওয়া হবে না। প্রাইভেট সেক্টরে চাকরিরত ভাই-বোনেরা বলেছে এত টাকা খরচ করে পড়াশোনা শেষ করে যখন চাকরি খুঁজতে পায়ের জুতা ক্ষয় হয়ে যায় এবং চাকরি পেলেও নামেমাত্র বেতনে চাকরিতে বাধ্য হয়ে জয়েন করতে হয়। বেসরকারি সেক্টরে নেই কোনো বেতন-ভাতার সরকারি নীতিমালা।
১৯৪৭ বিট্রিশ শাসন থেকে মুক্তি আবার ১৯৭১ থেকে পাকিস্তানের বৈষম্যের বিরুদ্ধে লাখ লাখ কৃষক, শ্রমিক-মেহনতি মানুষ মুক্তিযুদ্ধে জীবন দিলেও স্বাধীনতার ৫৫ বছরেও কৃষক, শ্রমিক-মেহনতি মানুষের মুক্তি মিলেনি।
বৈষম্য নিরসনে করে কৃষক, শ্রমিক-মেহনতি মানুষের ভাগ্য বদলাতে পারবে কী সাম্প্রতিক আমাদের ছাত্র -জনতার ২০২৪ এর জুলাই বিপ্লব ?
মোঃ সোহাগ আলী~২৭ মার্চ, ২০২৫
(উদ্যোক্তা, মিডিয়া ও মানবাধিকার কর্মী )