নিজস্ব প্রতিনিধি,মুক্ত বাংলাঃ
সোমবার ১২ই মে, ২০২৫ জাতীয় প্রেসক্লাব আকরাম খা হলে বাংলাদেশ মৌলিক বাংলা পার্টির উদ্যোগে অনুষ্ঠিত হয় “সচেতন তরুণ, সমৃদ্ধ বাংলাদেশ” শীর্ষক আপদকালীন প্রশিক্ষণ ও তরুণ উন্নয়ন কোর্স এবং সংবাদ সম্মেলন।
উক্ত সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন মৌলিক বাংলার সভাপতি মণ্ডলীর সদস্য ফরিদ আহমেদ, খান শোয়েব আমানউল্লাহ, মুখপাত্র মো. শামীম রেজা, সাধারণ সম্পাদক মণ্ডলীর সদস্য ফুয়াদ সাকী, সাদেক আহমেদ সজীব। আরো উপস্থিত ছিলেন মেজর (অব.) রশীদ সিদ্দিকী, কেন্দ্রীয় দপ্তর সম্পাদক মওলানা ফজলে রাব্বি, অর্থ সম্পাদক মাশকুর শাহরিয়া এবং কেন্দ্রীয় সদস্যবৃন্দ।
বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ নেতৃত্ব গড়ে তুলতে এবং তরুণ প্রজন্মকে দক্ষ, সচেতন ও দায়িত্বশীল নাগরিক হিসেবে প্রস্তুত করতে মৌলিক বাংলা নামের রাজনৈতিক দলের উদ্যোগে অনুষ্ঠিত হলো এক বিশেষ প্রশিক্ষণ কর্মসূচি—”সচেতন তরুণ, সমৃদ্ধ বাংলাদেশ”। পাঁচ ঘণ্টাব্যাপী এই ইন্টার্যাকটিভ ওয়ার্কশপে অংশ নেয় দেশের বিভিন্ন স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীসহ অর্ধ শতাধিক তরুণ-তরুণী।
সংবাদ সম্মেলন এর শুরুতে কেন্দ্রীয় মুখপাত্র শামীম রেজা প্রশিক্ষণ বিষয়ক ঘোষণা পত্র পাঠ করেন। তিনি বলেন একটি শক্তিশালী জাতি রাষ্ট্র তৈরিতে সেখানকার জনগোষ্ঠীকে অধিক সচেতন, দেশপ্রেমিক হতে হয়, থাকতে হয় দায়বদ্ধতা। আর সে জন্য আমাদের তরুণ, যুব সমাজকে প্রশিক্ষিত ও সামাজিক, রাজনৈতিক ভাবে সচেতন করতে হবে। এই উদ্যোগ পরবর্তীতে সারাদেশে ছড়িয়ে দেয়া আমাদের লক্ষ্য।
দলের সভাপতি ফরিদ আহমেদ বলেন, বর্তমান সময়ের যে মব চর্চা চলছে এবং রাজনীতির উপর আমাদের অবস্থান নিশ্চিত করার জন্য আমাদের এই প্রশিক্ষণের আয়োজন। খান শোয়েব আমানউল্লাহ বলেন- ধর্ম ভিত্তিক রাজনীতি উপমহাদেশকে অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক ভাবে বিভক্তি ও ধংসের দিকে ঠেলে দিচ্ছে, তরুণদের শারীরিক ও মানসিক ভাবে সঠিক প্রশিক্ষণ এর মাধ্যমে দেশের উন্নয়ন, নাগরিক অধিকার নিশ্চিত, সার্বভৌমত্ব রক্ষা ও মাদকের বিরুদ্ধে সঠিক পদক্ষেপ নেওয়া সম্ভব।
সাধারণ সম্পাদক ফুয়াদ সাকী বলেন, দেশ আজ এক মহা সঙ্কটময় মুহুর্ত পার করছে। আমাদেরকে মানবসৃষ্ট বন্যার মাধ্যমে, খড়া দান করে, সীমান্তে আগ্রাসনের মাধ্যমে, ধর্মের নামে ভেদাভেদ সৃষ্টি করতে চেয়ে বারবার দেশের বাইরের বহিঃশক্তি আক্রমণ চালাচ্ছে। এছাড়াও আমাদের দেশ মারাত্মক রকম ভূমিকম্প ঝুকিতে রয়েছে। এখনো আমাদের এখানে কোথাও দূর্ঘটনাবশত আগুন লাগলে প্রচুর জানমালের ক্ষয়ক্ষতি হয়, বহু প্রাণ যায়। এসবই আমাদের সার্বভৌমত্ব ও অস্তিত্বের প্রতি হুমকি। এজন্য আমাদেরকে ঘরে ঘরে প্রস্তুত থাকতে হবে। দেশের প্রয়োজনে যেকোন মুহুর্তে আমরা যেন দেশকে বিভিন্ন দূর্যোগ ও বিপদের হাত থেকে মুক্ত করতে পারি। তাই আমাদের প্রশিক্ষিত হওয়া প্রয়োজন।
কোর্সের মূল উদ্দেশ্য ছিল তরুণদের মধ্যে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা, মাদক প্রতিরোধ, শারীরিক ও মানসিক সুস্থতা, এবং রাজনৈতিক ও ভূরাজনৈতিক সচেতনতা বৃদ্ধি করা। অনুষ্ঠানটি পাঁচটি সেশনে ভাগ করে পরিচালিত হয়, প্রতিটি সেশনেই বাস্তব অভিজ্ঞতা, দলগত কাজ ও সরাসরি অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা হয়।
সেশনের সংক্ষিপ্ত বিবরণ:
সেশন ১: উদ্বোধন ও কোর্স ওভারভিউ (৩০ মিনিট)
অনুষ্ঠানের শুরুতে ইসলাম, হিন্দু, বৌদ্ধ ও খ্রিস্টান ধর্মের মানবতাবাদী বাণী পাঠ করে সকল ধর্মের শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের বার্তা দেওয়া হয়। এরপর স্বাগত বক্তব্যে তুলে ধরা হয় কেন এই প্রশিক্ষণ সময়োপযোগী—দুর্যোগ, মাদক সমস্যা ও রাজনৈতিক অস্থিরতার সাম্প্রতিক পরিসংখ্যানসহ।
সেশন ২: দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা (১ ঘণ্টা)
অগ্নিকাণ্ড, ভূমিকম্প ও বন্যা—এই তিনটি প্রধান দুর্যোগের ওপর আলোকপাত করা হয়।
ফায়ার এক্সটিংগুইশার ব্যবহারের লাইভ ডেমো, ভূমিকম্পের সময় “ড্রপ, কভার, হোল্ড অন” কৌশল এবং বন্যার সময় নিরাপদ স্থানান্তর ও খাদ্য-পানি সংরক্ষণের কৌশল শেখানো হয়। অংশগ্রহণকারীরা দলবদ্ধভাবে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার একটি পরিকল্পনা তৈরি করেন।
সেশন ৩: মাদক প্রতিরোধ ও শারীরিক সুস্থতা (১ ঘণ্টা)
মাদকের ভয়াবহ প্রভাব, “না” বলার কৌশল, peer pressure মোকাবিলা এবং হেল্পলাইন সংক্রান্ত তথ্য উপস্থাপন করা হয়। পাশাপাশি ২০ মিনিটের ফিটনেস রুটিন ও মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে আলোচনা করা হয়। অংশগ্রহণকারীদের ১০ মিনিটের গাইডেড এক্সারসাইজ করানো হয়।
সেশন ৪: রাজনৈতিক ও জিওপলিটিক্যাল সচেতনতা (১ ঘণ্টা ৩০ মিনিট)
তরুণদের রাজনৈতিক ভূমিকা, সংবিধান, নির্বাচন প্রক্রিয়া ও ফেক নিউজ চেনার কৌশল শেখানো হয়। এরপর আলোচনা হয় বঙ্গোপসাগরের কৌশলগত গুরুত্ব, জলবায়ু পরিবর্তন, আন্তর্জাতিক সহায়তা ও রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে।অংশগ্রহণকারীদের নিয়ে আয়োজন করা হয় একটি ডিবেট: “তরুণদের রাজনীতিতে অংশগ্রহণ বাড়ানো উচিত কি না?”
সেশন ৫: সমাপনী ও সারসংক্ষেপ (৩০ মিনিট)
কোর্সের শেষে অংশগ্রহণকারীরা প্রতিজ্ঞা করেন—“আমি মাদকমুক্ত থাকব, নিয়মিত ব্যায়াম করব।”
তারপর প্রশ্নোত্তর পর্ব, সনদপত্র বিতরণ এবং ফটো সেশনের মাধ্যমে কর্মসূচির সমাপ্তি ঘটে।
কোর্সে ব্যবহৃত উপকরণ:
ফায়ার এক্সটিংগুইশার, ফার্স্ট এইড কিট, প্রজেক্টর, হ্যান্ডআউট, ফিডব্যাক ফর্ম এবং ঐচ্ছিক যোগব্যায়াম ম্যাট।
প্রত্যাশিত ফলাফল ও ভবিষ্যৎ দৃষ্টিভঙ্গি:
এই প্রশিক্ষণের মাধ্যমে তরুণদের মধ্যে:
১. দুর্যোগকালীন পদক্ষেপ নেওয়ার দক্ষতা,
২. মাদক সম্পর্কে সচেতনতা ও প্রতিরোধ ক্ষমতা,
৩. রাজনৈতিক ও বৈশ্বিক ইস্যুতে অংশগ্রহণের আগ্রহ,
৪. শারীরিক-মানসিক সুস্থতার জন্য নিয়মিত অনুশীলনের অভ্যাস গড়ে উঠবে।
মৌলিক বাংলার আহ্বান—এই ধরনের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে আমরা গড়ে তুলতে চাই উন্নত মানসিকতা সম্পন্ন, দেশপ্রেমিক, রাজনৈতিকভাবে সচেতন ও দক্ষ একটি নতুন তরুণ প্রজন্ম, যারা ভবিষ্যতে বাংলাদেশের নেতৃত্ব দেবে।