এক যুগ পর যুদ্ধাপরাধ মামলায় জামায়াত নেতা এটিএম আজহারুল ইসলামের খালাস পাওয়া ‘ন্যায়বিচারের দৃষ্টান্ত’ বলে মন্তব্য করেছেন গণঅধিকার পরিষদের মুখপাত্র ও সিনিয়র সহ-সভাপতি ফারুক হাসান। তিনি বলেন, “আজকের রায় প্রমাণ করেছে—বিগত সময়ে যুদ্ধাপরাধের নামে পরিচালিত অনেক বিচারপ্রক্রিয়াই ছিল ত্রুটিপূর্ণ ও অস্বচ্ছ।”
মঙ্গলবার (২৭ মে) বিকেলে ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা পরিষদের অডিটরিয়াম হলরুমে অনুষ্ঠিত এক “তারুণ্যের সমাবেশ” ও আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন ফারুক হাসান। আলোচনা শেষে উপজেলা পরিষদ চত্বর থেকে একটি র্যালি বের হয়ে সমিরউদ্দীন স্মৃতি মহাবিদ্যালয়ে গিয়ে শেষ হয়। র্যালি শেষে সন্ধ্যায় সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়ে তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, “আওয়ামী লীগ আদালতের ঘাড়ে বন্দুক রেখে বিএনপির নেতা সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীসহ জামায়াতের একাধিক নেতাকে মিথ্যা মামলায় ফাঁসিতে ঝুলিয়েছে। আজহারুল ইসলামও সেই মামলার একজন ছিলেন। আজ তিনি ন্যায়বিচার পেয়েছেন।”
তিনি আরও বলেন, “ফাঁসি কার্যকর হওয়া বিএনপি ও জামায়াতের নেতাদের বিচার পুনরায় তদন্ত করা হোক, যাতে মৃত্যুর পর হলেও তারা ন্যায়বিচার পান।”
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু বামপন্থী ছাত্রনেতা আজহারুলের খালাসের প্রতিবাদে মিছিল করার বিষয়েও মন্তব্য করেন তিনি। বলেন, “গণতন্ত্রে মতপ্রকাশের অধিকার সবার আছে। তবে দেশের সর্বোচ্চ আদালতের দেওয়া চূড়ান্ত রায়ের পর কয়েকজন ভুঁইফোড় ছাত্রনেতার মিছিল তেমন গুরুত্ব বহন করে না।”
গণঅধিকার পরিষদের সাবেক ছাত্র উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ ও মাহফুজ আলমকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, “যেদিন তারা নতুন রাজনৈতিক দল গঠন করেছেন, সেদিন থেকেই তারা আর ছাত্র উপদেষ্টা নন। তারা সরকারের অংশ হয়ে ছাত্রদের স্বার্থ নয়, নিজের দলীয় স্বার্থে কাজ করেছেন। তাই আমরা বলেছি—তাদের পদত্যাগ করতে হবে।”
ড. মুহাম্মদ ইউনূস প্রসঙ্গে ফারুক হাসান বলেন, “আমরা বলছি ডঃ মুহাম্মদ ইউনূসকে আমরা চাই। জনগণের আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়ন না হওয়া পর্যন্ত আমরা যেতে দেব না। তিনি যদি সরেও যেতে চান তাহলে আমরা ও দেশের জনগণ তাকে এই চেয়ারে বসিয়ে রাখবে প্রয়োজনীয় সংস্কার বাস্তবায়ন না হওয়া পর্যন্ত।”
নির্বাচনী প্রশ্নে তিনি জানান, “এখন পর্যন্ত আমরা কোনো রাজনৈতিক জোটে যাচ্ছি না। নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে।”
নিজের নির্বাচন কেন্দ্র ঠাকুরগাঁও-২ আসন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “এখানে চাঁদাবাজি-টেন্ডারবাজির কোনো জায়গা হবে না। বিশেষ করে আমাদের সীমান্তবর্তী এলাকা এই এলাকাগুলো মাদকের ভরপুর ছিল। আমরা প্রয়োজনীয় এসব মাদক বন্ধ করব এবং তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করব।। ইতোমধ্যে ২০০টির বেশি মসজিদ, মাদ্রাসা ও মন্দিরে আমরা বরাদ্দ দিয়েছি।”
ভারতীয় গণমাধ্যম ‘রিপাবলিক বাংলা’র নাম উল্লেখ করে তিনি বলেন, “তারা আসলে ‘গুজব বাংলা’। তাদের কাজই হচ্ছে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালানো। আন্তর্জাতিক রিপোর্ট অনুযায়ী, ভারত বিশ্বের শীর্ষ গুজব রফতানিকারক দেশে পরিণত হয়েছে।”
তারুণ্যের সমাবেশে ঠাকুরগাঁও জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের গণঅধিকার পরিষদের নেতা-কর্মীরা অংশ নেন। পুরো আয়োজনে তরুণ ভোটারদের মধ্যে ব্যাপক সাড়া লক্ষ্য করা যায়।