স্টাফ রিপোর্টার:
ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার দুওসুও ইউনিয়নে সরকারি ভিজিডি কর্মসূচির আওতায় দরিদ্র নারীদের জন্য বরাদ্দকৃত ৫ মাসের ১৫০ কেজি চাল তুলতে গিয়ে অতিরিক্ত ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা খরচ করতে বাধ্য হচ্ছেন সুবিধাভোগীরা। অভিযোগ উঠেছে, ইউনিয়ন পরিষদের সচিব রফিকুল ইসলাম নিজের সিদ্ধান্তে ভিজিডি চাল তুলতে এনআইডি ভেরিফিকেশন কপি বাধ্যতামূলক করেছেন, যার ফলে দরিদ্রদের পড়তে হচ্ছে চরম ভোগান্তিতে।
সোমবার (২৩ জুন) বিকেলে সরেজমিনে দুওসুও ইউনিয়ন পরিষদে দেখা যায়, যাদের সরকার থেকে দেওয়া স্মার্ট কার্ড আছে তাদের চাল দেওয়া হচ্ছে। যেসব ভিজিডি কার্ডধারীর প্লাস্টিক স্মার্ট এনআইডি রয়েছে, তাদের চাল দেওয়া হচ্ছে না। চাল তুলতে হলে নির্বাচন অফিস থেকে এনআইডি ভেরিফিকেশন কপি আনতে বলা হচ্ছে, যার জন্য ফি, ভ্যাট ও কম্পিউটার প্রিন্ট খরচ মিলে গুণতে হচ্ছে ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা।
সুবিধাভোগী তানিয়া আক্তার, তাহেরা, আজনুর ও লাভলী জানান, আমরা গত ২ দিন ধরে হয়রানী হচ্ছি। আমারে এনআইডি কার্ড থাকা সত্ত্বেও চাল দিচ্ছেন না ভিজিডি চাল বিতরণে থাকা কর্মকর্তারা। তারা বলছেন এখন এসব কার্ড ভুয়া বানানো যায় তাই তারা এসব কার্ড দিয়ে দিচ্ছেন না। আমরা ধার দেনা করে ৩০০ টাকা দিয়ে ফেরিভিকেশন কপি নিয়ে আসি তারপর চাল দিবে।
আরেকজন সুবিধাভোগী হনুফা জানান, আমরা কয়েকজন উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কাছে আসছিলাম। স্যার ছিলেন না উনার সিএ ইউনিয়ন পরিষদের সচিবকে মুঠোফোনে জানালে সচিব আমাদের ভেরিফিকেশন কপি ছাড়াই চাল দিবে বলে জানায়। পরে ইউনিয়ন পরিষদে গিয়ে সচিব আবার বলে ভেরিফিকেশন কপি ছাড়া চাল দিব না। আমাদের অনেককেই এভাবে হয়রানী করাচ্ছে ইউনিয়ন পরিষদের সচিব রফিকুল ইসলাম।
০৪নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য সাইফুল ইসলাম বলেন, “এসব নিয়ম সরকারি নয়। সচিব ও ট্যাগ অফিসার নিজেরা তৈরি করেছে। আমি একজন আসল সুবিধাভোগীর জন্য অনুরোধ করলেও চাল দেয়নি। শুধু ভেরিফিকেশনের নামে ৩০০ টাকা খরচ করানো হচ্ছে।”
দুওসুও ইউনিয়নের সচিব রফিকুল ইসলাম বলেন, “ট্যাগ অফিসার উপজেলা আনসার কর্মকর্তা সাহারা বানু, মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা আবু বেলাল সিদ্দিক ও কমিটির সঙ্গে পরামর্শ করে আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এখন প্লাস্টিক স্মার্ট কার্ড নকল করা যায় একজন সুবিধাভোগীর চাল অন্যজন নিতে আসে এনআইডি কার্ড ডুপ্লিকেট করে। তাই সঠিক যাচাইয়ের জন্য ভেরিফিকেশন কপি নিচ্ছি। এটা সরকারি নিয়ম নয়, আমরা নিজেরা কমিটির লোকজন নিয়ম করেছি। টাকা তো আমরা নিচ্ছি না, সরকারের খাতে জমা হচ্ছে এটা তো ভালই। এতে রাজস্ব আয় বাড়ছে।”
এ বিষয়ে বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা আবু বেলা সিদ্দিক বলেন, “এই সিদ্ধান্ত আমার সঙ্গে আলোচনা করে নেওয়া হয়নি, আমি এসব বিষয়ে অবগত না।”
বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা নির্বাহী অফিসার পলাশ কুমার দেবনাথ বলেন, “বিষয়টি শুনেছি। ট্যাগ অফিসারকে পাঠানো হয়েছে। তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
উল্লেখ্য, ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার দুওসুও ইউনিয়নে ভিজিডি কার্ডধারী সুবিধাভোগীর সংখ্যা ৩১৭ জন।