মাজেদুল ইসলাম হৃদয়, স্টাফ রিপোর্টার:
ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা বিএনপির দুই নেতার বহিষ্কার আদেশ প্রত্যাহারের দাবিতে দ্বিতীয় দিনের কর্মসূচিতে মানববন্ধন করেন উপজেলা বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা। এ সময় কেঁদে কেঁদে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বিষয়টি দ্রুত সমাধানের আহ্বান জানান বড়বাড়ী ইউনিয়ন বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক সলেমান আলী।
বৃহস্পতিবার (৩১ জুলাই) দুপুর ১টা থেকে ঘন্টাব্যাপী উপজেলা বিএনপি কার্যালয় থেকে একটি বিক্ষোভ র্যালি বের হয়ে বালিয়াডাঙ্গী চৌরাস্তা মোড়ে গিয়ে মানববন্ধনে মিলিত হয়।
বক্তব্যে সলেমান আলী বলেন, বিএনপির মহাসচিব একসময় ড. টিএম মাহবুবুর রহমানকে বলেছিলেন, “আমরা তিন ভাই, আজ থেকে তুমি সহ আমরা চার ভাই। একদিন তোমার ভবিষ্যৎ গড়ে দেব।” অথচ আজ তাকেই জেলা বিএনপির কিছু নেতা ভুল বুঝিয়ে তাকে বহিষ্কার করিয়ে দিয়েছেন। আমরা চাই আপনি ও আপনার ভাই বিষয়টি নিজেরা সমাধান করুন। নয়তো বালিয়াডাঙ্গী বিএনপির ক্ষতি হবে। আমরা এমন লজ্জার কর্মসূচি করতে চাই না।
মানববন্ধনে আরও বক্তব্য রাখেন উপজেলা বিএনপির সহ-সভাপতি মীর রাজিউর রহমান আসাদ, আইয়ুব আলী খান, বড়বাড়ী ইউনিয়ন বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক সলেমান আলী, শ্রমিকদলের সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুর রাজ্জাক, বিএনপি নেতা দারুল ইসলাম, যুবদলের সাবেক সভাপতি আব্দুল কাদের এবং ছাত্রদলের ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক ইলিয়াস আলী হৃদয় প্রমুখ।
বক্তারা বলেন, গত ১২ জুলাই ২০২৫ তারিখে বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা বিএনপির কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয়। এতে সভাপতি পদে অ্যাডভোকেট মো. সৈয়দ আলম এবং সাধারণ সম্পাদক পদে ড. টি এম মাহবুবুর রহমান নির্বাচিত হন। ফলাফল ঘোষণা করেন জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মির্জা ফয়সল আমিন, যিনি বিএনপির মহাসচিবের ছোট ভাই।
তবে ফলাফল ঘোষণায় বিলম্ব ও অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার জেরে জেলা বিএনপি পরে কমিটি বাতিলের ঘোষণা দেয়। উপজেলা কমিটি তা প্রত্যাখ্যান করলে কেন্দ্রীয় কমিটিকে ভুল বুঝিয়ে নবনির্বাচিত দুই নেতাকে বহিষ্কার করানো হয়। যা উপজেলা নেতাকর্মীরা মেনে নিতে পারছে না। কারণ, এই দুই নেতা দীর্ঘদিন ধরে তৃণমূলের নেতাকর্মীদের নেতৃত্ব দিয়েছেন এবং ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধে সোচ্চার থেকেছেন।
বক্তারা অবিলম্বে বহিষ্কার আদেশ প্রত্যাহারের দাবি জানান এবং অন্যথায় ঢাকায় বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে কর্মসূচির হুঁশিয়ারি দেন।
এর আগে মঙ্গলবার (২৯ জুলাই) রাতে বিএনপির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেইজে দলটির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভীর স্বাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা বিএনপির সাবেক ভারপ্রাপ্ত সভাপতি অ্যাডভোকেট মো. সৈয়দ আলম ও সাবেক সাধারণ সম্পাদক ড. টি এম মাহবুবুর রহমানকে প্রাথমিক সদস্যসহ সকল পর্যায়ের পদ থেকে বহিস্কার করেন।
উল্লেখ্য, উল্লেখ্য, দীর্ঘ ৮ বছর পর গতকাল ১২ জুলাই বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার সমিরউদ্দীন স্মৃতি কলেজ মাঠে বিএনপির সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সভাপতি পদে অ্যাডভোকেট সৈয়দ আলম (ছাতা প্রতীক) ও আবু হায়াত নুরন্নবী (চেয়ার প্রতীক) প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। প্রথমে ছাতা প্রতীকের পক্ষে ২ ভোটে এগিয়ে থাকলেও পরে সেগুলো বাতিল করে ফলাফল ড্র ঘোষণা করা হয় এমন দাবী করা হয়।
সাধারণ সম্পাদক পদে ঘোড়া প্রতীক নিয়ে বিজয়ী হন ড. টিএম মাহবুবর রহমান এবং সাংগঠনিক সম্পাদক পদে মুহিব অয়ন চৌধুরী ও মামুন আকতার সবুর বিজয়ী হন।
ভোটগ্রহণ চলাকালে সভাপতি পদের ফলাফল নিয়ে উত্তেজনা তৈরি হলে সেনাবাহিনী এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। পরে কেন্দ্রে এসে ফলাফল ঘোষণা করেন জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মির্জা ফয়সল আমিন বাড়ী উদ্দেশ্যে যাচ্ছিলেন এসময় কে বা কাহারা তাকে বহনকারী গাড়ী ভাঙচুর করে তার উপর হামলা চালায়।
পরে গত ১৩ জুলাই বিকেলে ঠাকুরগাঁও জেলা বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পয়গাম আলী সংবাদ সম্মেলন করে কাউন্সিলের ফলাফল স্থগিত ঘোষণা করেন এবং জেলা বিএনপির সভায় দুই নেতাকে বহিষ্কারের সুপারিশ করে কেন্দ্রীয় কমিটির কাছে পাঠায়।
