স্টাফ রিপোর্টার:
ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার ভানোর ইউনিয়ন পরিষদে বিতরণের অপেক্ষায় থাকা সরকারি সহায়তার ১৩২ বস্তা চাল গুদামে পড়ে আছে, আর এই চালের জন্য ২২ জন দরিদ্র সুবিধাভোগী এক মাসেরও বেশি সময় ধরে ঘুরছেন—কখনো ইউনিয়ন পরিষদে, কখনো উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ে।
সোমবার (৫ জুলাই) বিকেলে চালের জন্য ইউপি কার্যালয়ে আসেন সুবিধাভোগী দেবেন পাল, আব্দুল জব্বার ও রুহুল আমিন। কিন্তু কার্যালয়ে কাউকে না পেয়ে হতাশ হয়ে ফিরে যান তারা।
দেবেন পাল বলেন, “আমার পুত্রবধূ প্রতিমা রানী ভিডাব্লিউবির সুবিধাভোগী। ওই তালিকায় থাকা ২২ জনকে বাদ দিয়ে ঈদের আগে সবার মাঝে চাল বিতরণ করা হয়েছে। কিন্তু আমাদের শুধু ঘুরানো হচ্ছে। আজ আসেন, কাল আসেন—ঠিক কী কারণে চাল দিচ্ছে না, তা কেউ স্পষ্ট করে বলছে না।”
রুহুল আমিন বলেন, “এর আগে ২৪ মাস ধরে চাল পেয়ে আসছি, কোনো সমস্যা হয়নি। কিন্তু গত মে মাসে একসঙ্গে ৫ বস্তা করে চাল বিতরণ করা হলেও আমাকে দেওয়া হয়নি। দিনের পর দিন শুধু ঘুরানো হচ্ছে।”
আব্দুল জব্বার বলেন, “গরিব মানুষ, প্রতিদিন যাতায়াতে খরচ হচ্ছে, সময় নষ্ট হচ্ছে। যদি চাল না দেয়, তাহলে সরাসরি বলে দিক। কিন্তু শুধু আশা দিয়ে ঘুরাচ্ছে। ইউএনও অফিসেও গিয়েছিলাম। তারা ইউনিয়ন পরিষদের প্রশাসনিক কর্মকর্তার কাছে পাঠায়, কিন্তু তিনিও কিছু বলছেন না।”
তথ্য অনুযায়ী, মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের আওতায় ভিডাব্লিউবি (VWB) প্রকল্পের মে মাসে ৩০৫ জন সুবিধাভোগীর জন্য ১,৫২৫ বস্তা চাল ইউপি কার্যালয়ে হস্তান্তর করে উপজেলা খাদ্য অধিদপ্তর। এর মধ্যে ২৮৩ জনকে চাল দেওয়া হলেও ২২ জনের বরাদ্দ আটকে রাখা হয়েছে।
জুন মাসেও ১ বস্তা করে চাল পাওয়া গেলেও তাদের দেওয়া হয়নি। ফলে গুদামে জমে আছে মোট ১৩২ বস্তা চাল—যার কিছু চাল ইতোমধ্যে নষ্ট হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা।
চাল মজুদ রাখার বিষয়টি স্বীকার করে ভানোর ইউনিয়ন পরিষদের প্রশাসনিক কর্মকর্তা হাবিবুল্লাহ বলেন, “ডিসেম্বর থেকে আমার পদের বিপরীতে সুবিধাভোগীদের চালের ডিও হচ্ছে। কিন্তু তালিকায় নাম না থাকায় ২২ জনের চাল আটকে রাখা হয়েছে।”
এর আগে কিভাবে তারা চাল পাচ্ছিলেন—এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, “আগে অন্যজনের নামের বরাদ্দ থেকে তাদের চাল দেওয়া হতো। কিন্তু এবার দিলে তালিকায় থাকা কেউ এসে দাবি করলে আমি কোথা থেকে চাল দেব? ১৩২ বস্তা চালের দাম তো অনেক।”
তিনি আরও জানান, “বিষয়টি লিখিতভাবে ইউএনওকে জানানো হয়েছে। নির্দেশনা পেলে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পলাশ কুমার দেবনাথ বলেন, “বিষয়টি দ্রুত সমাধানের ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।”