বাংলাদেশের রাজনীতিতে সাহস, সততা ও মানবিকতার প্রতীক হিসেবে যার নাম শ্রদ্ধাভরে উচ্চারিত হয়, তিনি জননেতা মাহমুদুর রহমান মান্না। আজ তিনি জীবনের ৭৫ বছরে পা রাখলেন। বয়সে তিনি প্রবীণ, কিন্তু চিন্তায়, আদর্শে ও কর্মোদ্যমে এখনো তরুণ— এক সত্যিকারের “৭৫ বছরের তরুণ”।
বগুড়ার সন্তান, ছাত্রনেতা থেকে জাতীয় নেতা মাহমুদুর রহমান মান্না বগুড়া জেলার এক শিক্ষিত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা আফসার উদ্দিন আহমেদ এবং মাতা মেহের আখতার। তিনি পরবর্তীতে মেহের নিগার-এর সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন।
ছাত্রজীবনে মান্না ভাই ছিলেন তুখোড় সংগঠক ও চিন্তাশীল নেতা। তিনি একসঙ্গে দুইটি ঐতিহাসিক পদে দায়িত্ব পালন করেছেন— ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) প্রাক্তন সহ-সভাপতি (ভিপি), চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (চাকসু) প্রাক্তন সাধারণ সম্পাদক (জিএস)। এমন সাফল্য বাংলাদেশের ছাত্ররাজনীতিতে বিরল। তাঁর নেতৃত্বে ছাত্ররাজনীতিতে এসেছিল আদর্শ, বুদ্ধিবৃত্তিকতা ও সাংগঠনিক শৃঙ্খলা।
নাগরিক ঐক্যের সহ-প্রতিষ্ঠাতা আহ্বায়ক দীর্ঘ রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা ও জাতীয় চেতনার ভিত্তিতে তিনি গঠন করেন নাগরিক ঐক্য, বাংলাদেশের নাগরিক সমাজের একটি গণতান্ত্রিক প্ল্যাটফর্ম। বর্তমানে তিনি এই সংগঠনের সভাপতি ও সহ-প্রতিষ্ঠাতা আহ্বায়ক। নাগরিক ঐক্যের মাধ্যমে মান্না ভাই সাধারণ মানুষ, তরুণ সমাজ ও মধ্যবিত্তের রাজনীতিকে নতুনভাবে চিনতে শিখিয়েছেন। তিনি বিশ্বাস করেন— “দেশকে বাঁচাতে হলে মানুষকে রাজনীতিতে ফিরিয়ে আনতে হবে।”এই দর্শন থেকেই তাঁর রাজনীতি— দলে নয়, জনগণের পক্ষে।
বন্দি, নির্যাতিত— তবুও অবিচল ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ সালে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) কর্তৃক মাহমুদুর রহমান মান্না গ্রেফতার হন। সে সময় বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) একজন নেতার সঙ্গে ফোনালাপ ফাঁস হয়, যেখানে তিনি সরকারবিরোধী আন্দোলনকে আরও শক্তিশালী করার আহ্বান জানান। কথোপকথনে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রাবাস পুনর্দখলের পরামর্শ দেন এবং এক অজ্ঞাত ব্যক্তির সঙ্গে আলাপে সরকার পরিবর্তনে সেনাবাহিনীর সহায়তার প্রসঙ্গ আসে— যা পরবর্তীতে রাজনৈতিকভাবে ব্যাখ্যা করা হয়। এই ঘটনায় তাঁকে দীর্ঘদিন আটক রাখা হয়। তবে সেই বন্দিজীবন তাঁকে দুর্বল করেনি; বরং তিনি আরও দৃঢ়, আরও অভিজ্ঞ হয়ে ফিরে আসেন। তিনি বুঝে যান— রাজনীতি মানে অন্যায়ের সামনে নত না হওয়া। “গুম” : এক ঐতিহাসিক বই, এক প্রতিবাদের দলিল গুম, নিখোঁজ, রাষ্ট্রীয় দমন— এই শব্দগুলো বাংলাদেশের ইতিহাসে এক ভয়াবহ বাস্তবতা। মাহমুদুর রহমান মান্না নিজেও গুমের শিকার হয়েছিলেন, আর সেই অভিজ্ঞতা থেকেই তিনি রচনা করেন ইতিহাসের দলিলসম “গুম” নামক বইটি। এই বই শুধু একটি সাহিত্যকর্ম নয়, এটি বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় সহিংসতা ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে এক সাহসী প্রতিবাদ। তিনি নিজের কষ্টকে রূপ দিয়েছেন অন্যদের ন্যায়ের দাবিতে।
মায়ের ডাক-এর অকৃত্রিম বন্ধু গুম হওয়া পরিবারের পাশে দাঁড়ানো মান্না ভাইয়ের মানবিকতার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। ‘মায়ের ডাক (Maayer Daak)’— গুম হওয়া ব্যক্তিদের পরিবারের মানবিক প্ল্যাটফর্মটির প্রতিটি আয়োজনে তিনি উপস্থিত থাকেন, বক্তব্য রাখেন, আশ্বাস দেন। সংগঠনটির প্রতিষ্ঠাতা ও সমন্বয়ক সানজিদা ইসলাম তুলি-র সঙ্গে তিনি কাজ করেছেন গুমবিরোধী আন্দোলনের প্রথম সারিতে। মান্না ভাই বিশ্বাস করেন—“গুম শুধু একজন মানুষকে নেয় না, পুরো একটি পরিবার, একটি সমাজকে ধ্বংস করে।”তাঁর প্রতিটি উপস্থিতি সেই পরিবারগুলোর জন্য এক আলোকরশ্মি।
সাহস, সততা ও মানবতার প্রতীক বাংলাদেশের রাজনীতিতে মাহমুদুর রহমান মান্না এক পরিচ্ছন্ন, সাহসী ও আদর্শবান জাতীয় নেতা। তিনি যে কোনো সরকারের অন্যায়ের বিরুদ্ধে মুখ খুলেছেন, নিপীড়িত মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন। তাঁর কণ্ঠে রাজনীতি মানে মানুষের কল্যাণ, তাঁর চিন্তায় রাজনীতি মানে গণতন্ত্রের পুনর্জন্ম।
আজ তিনি শুধু একজন রাজনীতিবিদ নন — তিনি একটি যুগের বিবেক, একটি প্রজন্মের প্রেরণা। জন্মদিনে শ্রদ্ধা ও শুভেচ্ছা আজ এই বিশেষ দিনে আমি, মো. মঞ্জুর হোসেন ঈসা, বাংলাদেশ জাতীয় মানবাধিকার সমিতির পক্ষ থেকে জননেতা মাহমুদুর রহমান মান্না ভাইকে জানাই আন্তরিক শুভেচ্ছা, শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা।
শুভ জন্মদিন মান্না ভাই —
আপনি দীর্ঘজীবী হোন, সুস্থ থাকুন, আপনার চিন্তা, সততা ও মানবিক সাহস আমাদের প্রজন্মকে পথ দেখাক।
মো. মঞ্জুর হোসেন ঈসা
চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ জাতীয় মানবাধিকার সমিতি