স্টাফ রিপোর্টার:
ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গীতে ইউএনও’র নির্দেশনা উপেক্ষা করে ভিডব্লিউবি সুবিধাভোগীদের মাঝে চাল বিতরণ না করে মাসের পর মাস ফেলে রাখার অভিযোগ উঠেছে উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা আবু বেলাল ছিদ্দিকের বিরুদ্ধে।
শুধু তাই নয়, ইউএনও’র চূড়ান্ত করা তালিকাতেও নাম পরিবর্তন করে অন্য সুবিধাভোগীকে অন্তর্ভুক্ত করে পূর্বের তারিখ দিয়ে বদলি হওয়া ইউএনও’র স্বাক্ষর নেওয়ার চেষ্টাও করেছেন তিনি। এর ফলে চাল বিতরণ নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে।
কর্মকর্তার অবহেলায় দীর্ঘদিন ধরে চাল না পাওয়ায় সুবিধাভোগী, ইউপি সচিব ও জনপ্রতিনিধিদের মধ্যে ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে। চার মাস ধরে গুদামে গরীবের চাল ফেলে রাখায় প্রতিনিয়ত চাল পাওয়ার আশায় ইউনিয়ন পরিষদে ঘুরে যাচ্ছেন সুবিধাভোগীরা। অতিরিক্ত মজুদের ফলে চাপে রয়েছেন উপজেলা খাদ্য গুদামের কর্মকর্তারা।
গেল এক সপ্তাহ ধরে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত জুলাই মাসে ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার ৮ ইউনিয়নে লটারির মাধ্যমে বাছাই করে ভিডব্লিউবির ২ হাজার ৪শত ৫৮ জন সুবিধাভোগীর তালিকা চূড়ান্ত করে বদলি হয়ে যান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পলাশ কুমার দেবনাথ। ওই মাসেই সুবিধাভোগীদের মাঝে ৩০ কেজি ওজনের চাল বিতরণের নির্দেশনা এবং চালের ডিও অনুমোদন দেন পরে যোগদান করা ইউএনও মফিজুর রহমান। নির্দেশ দেন দ্রুত চাল বিতরণের। কিন্তু চার মাস পেরিয়ে গেলেও সেই চাল পড়ে আছে গুদামে—বিতরণ হয়নি।
অভিযোগ উঠেছে—উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মফিজুর রহমান কয়েক দফায় ডেকে মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তাকে চাল বিতরণের নির্দেশ দিলেও তিনি কোনো কর্ণপাত করেননি। এদিকে আগের ইউএনও চূড়ান্ত করা তালিকা থেকে প্রায় ২৫০ জনের নাম বাদ দিয়ে নতুন তালিকায় স্বাক্ষর করাতে এনেছিলেন মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা আবু বেলাল ছিদ্দিক। ইউএনও স্বাক্ষর না করে আগের ইউএনও’র চূড়ান্ত তালিকা অনুযায়ী চাল বিতরণের নির্দেশ দেন। পরে তিনি বদলি হওয়া ইউএনও পলাশ কুমার দেবনাথের নিকট পূর্বের তারিখে স্বাক্ষর নেয়ার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন।
এদিকে লটারির মাধ্যমে বাছাই হওয়া সুবিধাভোগীদের তালিকা থেকে নাম বাদ দেওয়ার ঘটনায় মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে দুওসুও ইউনিয়ন, ধনতলা ইউনিয়ন ও চাড়োল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও সচিবরা এক মাস আগে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার বরাবরে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। অভিযোগের বিষয়ে জবাব চাইলে সন্তোষজনক জবাব দিতে পারেননি তিনি।
ইউপি সচিব ও চেয়ারম্যানদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, লটারিতে বিজয়ী সুবিধাভোগীরা প্রতিদিন ইউনিয়ন পরিষদে এসে চাল কবে পাবেন তা জানতে চাইছেন। মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে সঠিক নির্দেশনা না থাকায় তারা কোনো জবাব দিতে পারছেন না; ফলে ঘুরিয়ে দিতে হচ্ছে সুবিধাভোগীদের।
বালিয়াডাঙ্গী খাদ্য গুদামের কর্মকর্তা শাখাওয়াৎ হোসেন বলেন, “উপজেলার ৮ ইউনিয়নের ভিডব্লিউবি কার্যক্রমের আওতায় জুলাই থেকে অক্টোবর পর্যন্ত চার মাসের ৩০ কেজি ওজনের ৯ হাজার ৮৩২ বস্তা চাল গুদামে পড়ে আছে। বারবার অনুরোধ করেও মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা চাল বিতরণের কোনো উদ্যোগ নিচ্ছেন না। এর মধ্যে নভেম্বরে নতুন চাল চলে আসবে। গরীবের চাল আটকে রাখা ঠিক হয়নি—আমরাও নিরুপায়।”
বালিয়াডাঙ্গীর সাংবাদিক আল মামুন জীবন বলেন, “এই কর্মসূচির সুবিধাভোগীদের কাছে ১ কেজি চালও অনেক মূল্যবান। ৩০ কেজি চাল পেলে তাদের খাবারের কষ্ট অনেকটা লাঘব হয়। কর্মকর্তারা তো চাল কিনতে হয় না, চালের জন্য অপেক্ষা করতে হয় না—তাই গরীবের কষ্ট তারা বোঝেন না।”
উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা আবু বেলাল ছিদ্দিক বলেন, “তালিকার স্বাক্ষর হয়ে গেলেই চাল বিতরণ শুরু হবে।” গরীবের চাল এতদিন ফেলে রাখা উচিত কিনা—এমন প্রশ্নের উত্তরে বলেন, “আমার কিছু করার নেই।”
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মফিজুর রহমান বলেন, “বিতরণের জন্য আনা চাল গুদামে ফেলে রাখার সুযোগ নেই। বারবার বলার পরও চাল বিতরণ করেননি মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা। সুবিধাভোগীরা কেউ লিখিত অভিযোগ দিলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
বদলি হওয়া ইউএনও পলাশ কুমার দেবনাথ বলেন, “সুবিধাভোগীদের তালিকায় পূর্বের তারিখ দিয়ে স্বাক্ষর করার প্রশ্নই ওঠে না। লটারিতে যাদের নাম উঠেছে—তারাই চাল পাওয়ার যোগ্য।”
২০১৭ সালের ১৪ নভেম্বর বালিয়াডাঙ্গী উপজেলায় যোগদান করেন মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা আবু বেলাল ছিদ্দিক। যোগদানের পর থেকেই বিভিন্ন অনিয়মের জন্য গণমাধ্যমের শিরোনামে রয়েছেন তিনি। ৮ বছরে বদলি হয়েছেন ৭ জন ইউএনও, কিন্তু তিনিই একই কর্মস্থলে দায়িত্বে রয়েছেন। শুধু তাই নয়, পাশবর্তী উপজেলা রাণীশংকৈলেও অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করছেন এই কর্মকর্তা।